অনেকে মনে করেন শিশুর একটু আধটু বমি হওয়া স্বাভাবিক। আবার অনেকে ভাবেন পেটের গণ্ডগোল বা গ্যাস থেকে শিশু বমি করে। আদতে তা ঠিক নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিংবা রাতে খাবার খাওয়ার পরই যদি সন্তান বমি করে, তাহলে সাবধান হোন। বমির পেছনে বড় কোনো অসুখ লুকায়িত থাকতে পারে। শিশু যদি প্রতিদিন রাতে বমি করে, তাহলে তার খাওয়াদাওয়া নিয়ে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনই কিছু লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশু কেন ঘন ঘন বমি করে সে বিষয়ে ভারতীয় শিশু চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানাচ্ছেন, এমন অনেক খাবার আছে, যা শিশুর সহ্য না-ও হতে পারে। যেমন অনেক শিশুরই দুধ হজম হয় না। রাতে যদি দুধ বা দুগ্ধজাত কোনো খাবার খাওয়ানো হয়, তাহলে বমি হয়ে যেতে পারে। আবার রাতে বেশি ভারি খাবার খাওয়ালেও অম্বলের কারণে বমি হতে পারে। শিশু যদি ঘন ঘন বাইরের খাবার খায়, তা হলে অন্ত্রে বিষক্রিয়ার কারণেও বমি শুরু হতে পারে। অনেক সময়ই এমন হয় যে, শিশু বমি করার পরে পেট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে ভেবে বাবা-মায়েরা আবারও ভারি খাবার খাওয়ান। ফলে শিশুর অস্বস্তি আরও বাড়ে। বমি করার পরে কেবল তরল খাবারই দেওয়া যেতে পারে। অথবা বার বার লবন-চিনি মিশ্রিত পানি অথবা ওআআরএস খাওয়াতে হবে।
যেসব কারণে শিশুর বমি হতে পারে
• শিশু যদি রাতে খেয়েই শুয়ে পড়ে, তাহলে খাবার হজম হতে দেরি হবে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা দেখা দেবে। তখন খাদ্যনালি দিয়ে অ্যাসিড উঠে আসতে থাকবে। গলা-বুক জ্বালা করবে এবং সেই কারণে শিশু বমি করবে।
• পেটে আলসার হয়ে থাকলেও বমি করার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তখন শিশুর খিদে কম হবে, কিছু খেলেই পেট ভার হয়ে থাকবে, পেটে ব্যথা হবে। ঘন ঘন বমি ভাব আসবে।
• মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলেও বমির প্রবণতা বাড়ে। বাবা-মায়েদের খেয়াল করতে হবে, শিশু প্রস্রাব করতে ভয় পাচ্ছে কি না। বারে বারে প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা, গায়ে হালকা জ্বর, বমি ভাব— এ সবই মূত্রনালির সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
• হাঁপানির কারণেও রাতে বমি হতে পারে। শিশু ঘুমোনোর সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে কিনা, তা খেয়াল করতে হবে। যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শুকনো কাশি হতে থাকে, তাহলেও সাবধান হতে হবে। অনেক সময়ে রাতে হাঁপানির টান উঠলে কাশি শুরু হয়, তখন বমি হতে পারে।
• ফ্যারেনজাইটিসের সমস্যা থেকেও বমি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গলার পেছনের দেওয়ালের গ্র্যানিউলগুলি (গুটি গুটি লাল দানার মতো) বড় হয়ে গেছে। একে বলা হয়, গ্র্যানিউলার ফ্যারেনজাইটিস। তখন খাবার গিলতে কষ্ট হয়, শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়। পাঁচ থেকে বারো বছর বয়সীদের এই সমস্যা বেশি হয়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
শিশু যদি টানা ২-৩ দিন দিনে তিন বারের বেশি বমি করে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর সঙ্গে শিশুর পেটে ব্যথা, গলা ও মাথা ব্যথা, এমনকি সারা গায়ে র্যা শ বেরোতেও পারে। পানিশূন্যতার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
সম্পাদকীয় কার্যালয়
দৈনিক বাংলা মোড়
ঢাকা-১০০০
Copyright © 2025 Biplob Barta BD. All rights reserved.