বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Homeজাতীয়আজ ৫৩ তম, মহান বিজয় দিবস

আজ ৫৩ তম, মহান বিজয় দিবস

স্টাফ রিপোর্ট: আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙালি জাতি অর্জন করে তার শ্রেষ্ঠতম অর্জন ‘বিজয়’। এদিন বাঙালির আত্মপরিচয় লাভের দিন।

অনেক সাহসিকতা, বীরত্ব, আত্মত্যাগ, অশ্রু ও সংগ্রাম শেষে স্বাধীন দেশে বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ বছর বিজয় দিবসের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে একটি নতুন অনুষঙ্গ।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদরাও অঙ্গাঙ্গিভাবে থাকছেন এবারের বিজয় দিবসে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন এক মাতৃভূমি গড়ার প্রত্যাশায় এবার বিজয় দিবস উদযাপন করবে দেশের আপামর মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমপর্ণ করে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

আরো পড়ু     বিজয় দিবসের বাণীতে জাতির উদ্ধেশ্য যা বললেন রাষ্ট্রপতি

বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হয় লাল-সবুজ রঙের উজ্জ্বল এক পতাকা—স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশ অর্জন করে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, নিজস্ব সংবিধান ও মানচিত্র।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুক্তিলাভের পর এই অঞ্চলের (তত্কালীন পূর্ব বাংলা) মানুষের মধ্যে প্রথম স্বাধীনতার সচেতন বীজ বপন হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর ১১ দফা ও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তাস্তর না করে নানা টালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্য ও বর্বরতম গণহত্যা চালায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

পরে মার্চ মাসেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলা ও ইংরেজিতে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলে তা মুহূর্তেই মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এই ঘোষণার পর মানুষের মনে শক্তি ও আশার সঞ্চার হয়।

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর বুকে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামের এক নতুন রাষ্ট্রের।

বিজয় দিবস উদযাপন করতে আজ সোমবার সকাল থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতীর শহীদ ও বীরদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি মুখর হবে দেশাত্মবোধক গানের সুরে। বাড়ির ছাদে, অফিস-অদালতে, গাড়িতে, রিকশায় সর্বত্র উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। লাল-সবুজের আলোকসজ্জায় সাজবে সরকারি-বেসরকারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো।

কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সময় ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও স্থাপনাগুলো সজ্জিত হবে জাতীয় পতাকায়।

দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলার (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত শিল্পপণ্যের) আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য থাকবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এদিন বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ), বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জাহাজসমূহ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

জাতীয় কর্মসূচি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ